ছেমা–কাওয়ালী জায়েজ প্রসঙ্গে, পর্ব-১
১। হযরত দাউদ (আঃ) এর প্রতি নাজিলকৃত ‘জবুর’ কিতাব (খৃষ্টপুর্ব) ১৫০টি সংগীতের সমষ্টি । হযরত দাউদ (আঃ) এর কন্ঠস্বর ছিল সুমধুর । ইংরেজীতে জবুর কিতাব কে “Psalms of David” এবং বাংলায় “গীত সংহীতা” বলা হয় । “দাঊদ নবীকে ফজিলত বা বিশেষত্ব প্রদান করে হইয়াছিল “ ( সুরা সাবা, রুকু -১০) । এই ফজিলত বা বিশেষত্বই ছিল তাঁর সুমধুর সংগীত বিদ্যা । সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, তখন হতে তিন হাজার বছর পুর্বেও একজন আল্লাহর নবী আল্লাহর প্রসংশায় সংগীতের আশ্রয় নিয়েছিলেন । এতে বুঝা যায় আরাধনায় সংগীতের ব্যবহার প্রকৃত সনাতন ইসলামী হেকমত । এটা কোন নুতন আবিষ্কার বা অনৈসলামিক কৌশল বা পদ্ধতি নয় ।
২। ‘যাহারা বাক্যাদি শ্রবণ করে এবং যাহা ভাল তাহা অনুসরণ করে ।‘ – (আল কোরআন)।
৩। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলিতেছেন – একদা ঈদের সময় রসুল (সঃ) কাপড় মুড়ি দিয়া শুইয়া আছেন আর দুইজন ‘জারিয়া’ দফ বাজাইয়া ‘বুওয়াছ’ যুদ্ধের সংগীত গাহিতেছিল, এমন সময় আমার পিতা হযরত আবু বকর (রাঃ)সেখানে উপস্থিত হইয়া ভৎর্সনা করিতে লাগিলেন । হযরত তখন মুখের কাপড় ফেলিয়া দিয়া বলিলেন – আবু বকর, তাহাদের (নিজ অবস্থায় ) ছেড়ে দিন, কেন না প্রত্যেক জাতির একটা উৎসব আছে, ইহা আমাদের উৎসবের দিন ।(বোখারী, মুসলিম , মেশকাত ও এবনে মাজা )।
৪। আনাছ ইবনে মালেক হতে বর্ণিত - মদিনায় রসুল (সঃ) কোন এক স্থানে পদার্পণ করিলেন, তথায় কয়েকজন স্ত্রীলোক দফ বাজাইয়া গান করিতেছিল ‘আমরা বনী নজ্জার গোত্রের স্ত্রীলোক, আমাদের কতইনা সৌভাগ্য যে, মুহাম্মদ(সঃ) আমাদের প্রতিবেশী ।‘ তখন নবীয়ে করিম (সঃ) বলিলেন- খোদাই জানেন আমি তোমাদের কত ভালোবাসি । (ইবনে মাজা, বোখারী , মুসলিম) ।
৫। ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত আছে - বিবি আয়শা (রাঃ) তাঁহার একজন আনছার বংশীয়া আত্মিয়া বালিকার বিবাহ দেন । তখন হযরত (সঃ) শুভাগমণ করিয়া ফরমাইলেন -...নবধুর সঙ্গে একজন গায়িকা পাঠাইয়াছ তো ? তাহারা উত্তরে বলিলেন – না । তখন নবীয়ে করিম (সঃ) বলিলেন – আনছার বংশ খুবই সংগীত প্রিয়, সুতরাং যদি একজন গায়িকা তাহার সঙ্গে পাঠাইয়া দিতে । ( আতাইনাকুম আতাইনাকুম গানের জন্য) । ( ইবনে মাজা ও বোখারী)
৬। ‘ হে রসুল আপনার গরীব উম্মতগণ ধনী উম্মতগণের অর্ধদিবস (বর্তমান ৫০০ শত বছর) পুর্বে জান্নাতে গমণ করিবে ।‘ এ ওহি নাজিল হবার পর রসুল (সঃ) খুব খুশী হয়ে উপস্থিত সাহাবাগণের মধ্যে কেউ সংগীত জানে কি না জানতে চাইলে, এক বদরী বলতে লাগলেন- ‘অনর্থ ও খাহেশানীতে নফসানীর সর্প আমার কলিজার দরদে বিস্তার লাভ করেছে, যাহার কোন আরোগ্যকারী বা বিষ্ক্রিয়া ধ্বংসকারী নাই, কিন্তু যে বন্ধুর প্রতি আমি আসক্ত, তাঁহারই নিকট আমার তাবিজ এবং বিষ পাথর ।‘ ইহা শ্রবণে রসুল (সঃ) এবং সাহাবাগণ ভাবান্বিত হয়ে নাচতে লাগলেন । এমন কি রসুল (সঃ) স্কন্দ মোবারক হতে চাদর মোবারক মাটিতে পড়ে গেল । নৃত্য শেষ হলে আবু সুফিয়ান(রাঃ) এর পুত্র মাবিয়া বললেন- আপনাদের খেলা যে কত সুন্দর ইয়া রাসুলুল্লাহ(সঃ) ! তখন রসুল (সঃ) বললেন –“যে ব্যক্তি বন্ধুর জিকির শুনিয়া অজদ করে না সে মহৎ নয় ।“ অতঃপর নবী করিম (সঃ) স্বীয় মহাপবিত্র চাদর খানা ৪০০ শত টুকরা করে উপস্থিত সাহাবাগণের মধ্যে বন্টন করে দিলেন । (তফসিরে আহমদী) ।
৭। হযরত রসুলে করিম (সঃ) সংগীতের সাহায্যের স্বীয় উট পরিচালনার্থে ‘আনজেশা’ নামক এক গায়ক নিযুক্ত রাখিয়াছিলেন । ( বোখারী) ।
(চলবে)
ছেমা–কাওয়ালী জায়েজ প্রসঙ্গে, পর্ব-২
১। হযরত মাওলানা জালালুদ্দিন রূমী (রঃ) এর প্রবর্তিত “ মৌলবিয়া ত্বরিকায়’ ( জিকির সমেত গ্রহ-উপগ্রহের অনুকরণে ঘুর্ণায়মান লাটিমের মত নিজ শরীরকে ঘুরায়ে বৃত্তাকারে নৃত্য করা) বাদ্যযন্ত্র সহকারে ছেমা-কাওয়ালী প্রচলন ছিল ।
২। সংগীত কি ? – বলাবাহুল্য সংগীত হচ্ছে এমন সুললিত ও ভারসাম্যপুর্ণ স্বর শ্রবণ করা, যার অর্থ হৃদয়ঙ্গম হয় । (এহিয়াউল উলুমুদ্দি) ।
৩। সংগীত মনকে আন্দোলিত করে এবং মনের প্রবল ভাবকে উত্তোলিত করে । তাই আমরা বলি যে, আত্মার সাথে ভারসাম্যপুর্ণ সংগীতের সম্পর্ক রাখার বিষয়টি আল্লাহতায়ালার একটি ভেদ । ফলে সংগীত আত্মার মধ্যে আশ্চর্য প্রভাব বিস্তার করে । ( এহিয়াউল উলুমুদ্দি) ।
৪। সংগীত যার অন্তরকে নাড়া দেয়না, সে অসম্পুর্ণ, সমতাবিচ্যুত, আধ্যাত্বিকতাবর্জিত এবং মনের দিক দিয়া উট, পশু-পাখী এমন কি সকল চতুষ্পদ জন্তু থেকে অধিকতর স্থুল ।
( এহিয়াউল উলুমুদ্দি) ।
৫। অন্তরে প্রভাব বিস্তারের দিকে লক্ষ্য করলে সংগীতকে সর্বাবস্থায় বৈধ অথবা সর্বাবস্থায় হারাম বলা ঠিক হয় না । এটা অবস্থা, ব্যক্তি এবং সংগীতের ধরণভেদ বিভিন্নরূপ হয়ে থাকে । এ ক্ষেত্রে অন্তরের ভাবের যে বিধান, সংগীতের বিধানও তাই । ( এহিয়াউল উলুমুদ্দি) ।
৬। “আগার আদমী রা নাবাশ্ত খারাশ্ত” গান-বাদ্যের দ্বারা যদি কোন মানুষের ভাবান্তর না হয়, তবে সে গর্দভ বিশেষ – মনুষ্য পদবাচ্য নহে । (গোলেস্তা – হযরত শেখ শাদী (রঃ) ) ।
(চলবে)
ছেমা–কাওয়ালী জায়েজ প্রসঙ্গে, পর্ব-৪
১। সংগীত এক সম্প্রদায়ের জন্য ফরজ, এক সম্প্রদায়ের জন্য ছুন্নাত, এক সম্প্রদায়ের জন্য বেদআত । অর্থাৎ - ফরজ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের জন্য, ছুন্নাত প্রেমিকদের জন্য আর বেদআত গাফেল বা অলস ব্যক্তিদের জন্য । (ছিররোল আছরার – হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ)।
২। সারা বিশ্ব ধর্মীয় সংগীতে আল্লাহর প্রেম মত্ততায় ও সুরে পরিপুর্ন, কিন্তু একজন অন্ধ আয়নার মধ্যে কি দেখবে ? ‘ ( বোস্তা – হযরত শেখ শাদী (রঃ) ।
৩। গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মইন্নুদ্দিন চিশতি (রঃ) ভারত উপমহাদেশে এসে ভারতবাসীর মজাকি-রুচি দেখে তাদের রুচি মাফিক ধর্মীয় আরাধনায় বাদ্যযন্ত্র সহকারে সংগীত অনুমোদন করেছেন ।
৪। ছেমা জায়েজ - মাদারেজুন নবুয়ত–মাওঃ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহ্লভী (রঃ) ।
৫। ছেমা জায়েজ - তাফসিরে আহমদী ও তাফসিরে আজিজ ।
৬। ছেমা জায়েজ - তোহফাতুল আখইয়ার, আগানী এস্তিয়াব, একদুল ফরিদ, এহিয়াউল উলুল, তবলিছ, আজাবীর, কিমিয়ায়ে সা’আদত, কেতাবুল আহকাম, এবং আদিল্লাতুছ ছেমা ও শামী ।
৭। সংগীত মাত্রকেই হারাম বললে কাফের হবে – ‘ফতওয়ায়ে খাইরিয়া’, ‘বাওয়ারেকুচ্ছমা ফি তকফিয়ে’, মই এয়াহরেমুচ্ছমা । (চলবে)
ছেমা–কাওয়ালী জায়েজ প্রসঙ্গে, পর্ব-৫
১। ‘নোক্কাতুল হক’ কিতাবে – মাওলানা আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রঃ) বর্ণিতঃ
(ক) যে ব্যক্তি সকল অবস্থায় সর্বপ্রকার ছেমা বা সংগীতকে হারাম বলে বিশ্বাস করে, সে অন্ধ জাহেল এবং সকল প্রকার সংগীতকে সর্বাবস্থায় জায়েজ মনে করে সে ফাসেক বা গোনাহগার ।
(খ) ছেমা মোবাহ বা হালাল । ইমাম চতুষ্টয়ও ছেমা শ্রবণ করেছেন (মাদারেজুন নবুয়ত)
(গ) নির্দোষ সংগীত শ্রবণ করার সিদ্ধতা চার ইমাম স্বীকার করেছেন - হযরত মোল্লা আলী ক্কারী হানাফী (রঃ) ।
(ঘ) ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) খলিফা হারুন-অর-রশিদের মজলিসে সংগীত শ্রবণ করিতেন । তাঁকে সংগীত সম্পর্কে মাছআলা জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি ইমামে আজম আবু হানিফা (রঃ) এর প্রতিবেশীর সংগীত শ্রবণের বিষয়টি উল্লেখ করে বলতেন – সংগীত জায়েজ না হলে ইমাম আজম (রঃ) কখনো প্রতিরাতে নিজের মূল্যবান সময় অযথা নষ্ট কর
১। হযরত দাউদ (আঃ) এর প্রতি নাজিলকৃত ‘জবুর’ কিতাব (খৃষ্টপুর্ব) ১৫০টি সংগীতের সমষ্টি । হযরত দাউদ (আঃ) এর কন্ঠস্বর ছিল সুমধুর । ইংরেজীতে জবুর কিতাব কে “Psalms of David” এবং বাংলায় “গীত সংহীতা” বলা হয় । “দাঊদ নবীকে ফজিলত বা বিশেষত্ব প্রদান করে হইয়াছিল “ ( সুরা সাবা, রুকু -১০) । এই ফজিলত বা বিশেষত্বই ছিল তাঁর সুমধুর সংগীত বিদ্যা । সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, তখন হতে তিন হাজার বছর পুর্বেও একজন আল্লাহর নবী আল্লাহর প্রসংশায় সংগীতের আশ্রয় নিয়েছিলেন । এতে বুঝা যায় আরাধনায় সংগীতের ব্যবহার প্রকৃত সনাতন ইসলামী হেকমত । এটা কোন নুতন আবিষ্কার বা অনৈসলামিক কৌশল বা পদ্ধতি নয় ।
২। ‘যাহারা বাক্যাদি শ্রবণ করে এবং যাহা ভাল তাহা অনুসরণ করে ।‘ – (আল কোরআন)।
৩। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলিতেছেন – একদা ঈদের সময় রসুল (সঃ) কাপড় মুড়ি দিয়া শুইয়া আছেন আর দুইজন ‘জারিয়া’ দফ বাজাইয়া ‘বুওয়াছ’ যুদ্ধের সংগীত গাহিতেছিল, এমন সময় আমার পিতা হযরত আবু বকর (রাঃ)সেখানে উপস্থিত হইয়া ভৎর্সনা করিতে লাগিলেন । হযরত তখন মুখের কাপড় ফেলিয়া দিয়া বলিলেন – আবু বকর, তাহাদের (নিজ অবস্থায় ) ছেড়ে দিন, কেন না প্রত্যেক জাতির একটা উৎসব আছে, ইহা আমাদের উৎসবের দিন ।(বোখারী, মুসলিম , মেশকাত ও এবনে মাজা )।
৪। আনাছ ইবনে মালেক হতে বর্ণিত - মদিনায় রসুল (সঃ) কোন এক স্থানে পদার্পণ করিলেন, তথায় কয়েকজন স্ত্রীলোক দফ বাজাইয়া গান করিতেছিল ‘আমরা বনী নজ্জার গোত্রের স্ত্রীলোক, আমাদের কতইনা সৌভাগ্য যে, মুহাম্মদ(সঃ) আমাদের প্রতিবেশী ।‘ তখন নবীয়ে করিম (সঃ) বলিলেন- খোদাই জানেন আমি তোমাদের কত ভালোবাসি । (ইবনে মাজা, বোখারী , মুসলিম) ।
৫। ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত আছে - বিবি আয়শা (রাঃ) তাঁহার একজন আনছার বংশীয়া আত্মিয়া বালিকার বিবাহ দেন । তখন হযরত (সঃ) শুভাগমণ করিয়া ফরমাইলেন -...নবধুর সঙ্গে একজন গায়িকা পাঠাইয়াছ তো ? তাহারা উত্তরে বলিলেন – না । তখন নবীয়ে করিম (সঃ) বলিলেন – আনছার বংশ খুবই সংগীত প্রিয়, সুতরাং যদি একজন গায়িকা তাহার সঙ্গে পাঠাইয়া দিতে । ( আতাইনাকুম আতাইনাকুম গানের জন্য) । ( ইবনে মাজা ও বোখারী)
৬। ‘ হে রসুল আপনার গরীব উম্মতগণ ধনী উম্মতগণের অর্ধদিবস (বর্তমান ৫০০ শত বছর) পুর্বে জান্নাতে গমণ করিবে ।‘ এ ওহি নাজিল হবার পর রসুল (সঃ) খুব খুশী হয়ে উপস্থিত সাহাবাগণের মধ্যে কেউ সংগীত জানে কি না জানতে চাইলে, এক বদরী বলতে লাগলেন- ‘অনর্থ ও খাহেশানীতে নফসানীর সর্প আমার কলিজার দরদে বিস্তার লাভ করেছে, যাহার কোন আরোগ্যকারী বা বিষ্ক্রিয়া ধ্বংসকারী নাই, কিন্তু যে বন্ধুর প্রতি আমি আসক্ত, তাঁহারই নিকট আমার তাবিজ এবং বিষ পাথর ।‘ ইহা শ্রবণে রসুল (সঃ) এবং সাহাবাগণ ভাবান্বিত হয়ে নাচতে লাগলেন । এমন কি রসুল (সঃ) স্কন্দ মোবারক হতে চাদর মোবারক মাটিতে পড়ে গেল । নৃত্য শেষ হলে আবু সুফিয়ান(রাঃ) এর পুত্র মাবিয়া বললেন- আপনাদের খেলা যে কত সুন্দর ইয়া রাসুলুল্লাহ(সঃ) ! তখন রসুল (সঃ) বললেন –“যে ব্যক্তি বন্ধুর জিকির শুনিয়া অজদ করে না সে মহৎ নয় ।“ অতঃপর নবী করিম (সঃ) স্বীয় মহাপবিত্র চাদর খানা ৪০০ শত টুকরা করে উপস্থিত সাহাবাগণের মধ্যে বন্টন করে দিলেন । (তফসিরে আহমদী) ।
৭। হযরত রসুলে করিম (সঃ) সংগীতের সাহায্যের স্বীয় উট পরিচালনার্থে ‘আনজেশা’ নামক এক গায়ক নিযুক্ত রাখিয়াছিলেন । ( বোখারী) ।
(চলবে)
ছেমা–কাওয়ালী জায়েজ প্রসঙ্গে, পর্ব-২
১। হযরত মাওলানা জালালুদ্দিন রূমী (রঃ) এর প্রবর্তিত “ মৌলবিয়া ত্বরিকায়’ ( জিকির সমেত গ্রহ-উপগ্রহের অনুকরণে ঘুর্ণায়মান লাটিমের মত নিজ শরীরকে ঘুরায়ে বৃত্তাকারে নৃত্য করা) বাদ্যযন্ত্র সহকারে ছেমা-কাওয়ালী প্রচলন ছিল ।
২। সংগীত কি ? – বলাবাহুল্য সংগীত হচ্ছে এমন সুললিত ও ভারসাম্যপুর্ণ স্বর শ্রবণ করা, যার অর্থ হৃদয়ঙ্গম হয় । (এহিয়াউল উলুমুদ্দি) ।
৩। সংগীত মনকে আন্দোলিত করে এবং মনের প্রবল ভাবকে উত্তোলিত করে । তাই আমরা বলি যে, আত্মার সাথে ভারসাম্যপুর্ণ সংগীতের সম্পর্ক রাখার বিষয়টি আল্লাহতায়ালার একটি ভেদ । ফলে সংগীত আত্মার মধ্যে আশ্চর্য প্রভাব বিস্তার করে । ( এহিয়াউল উলুমুদ্দি) ।
৪। সংগীত যার অন্তরকে নাড়া দেয়না, সে অসম্পুর্ণ, সমতাবিচ্যুত, আধ্যাত্বিকতাবর্জিত এবং মনের দিক দিয়া উট, পশু-পাখী এমন কি সকল চতুষ্পদ জন্তু থেকে অধিকতর স্থুল ।
( এহিয়াউল উলুমুদ্দি) ।
৫। অন্তরে প্রভাব বিস্তারের দিকে লক্ষ্য করলে সংগীতকে সর্বাবস্থায় বৈধ অথবা সর্বাবস্থায় হারাম বলা ঠিক হয় না । এটা অবস্থা, ব্যক্তি এবং সংগীতের ধরণভেদ বিভিন্নরূপ হয়ে থাকে । এ ক্ষেত্রে অন্তরের ভাবের যে বিধান, সংগীতের বিধানও তাই । ( এহিয়াউল উলুমুদ্দি) ।
৬। “আগার আদমী রা নাবাশ্ত খারাশ্ত” গান-বাদ্যের দ্বারা যদি কোন মানুষের ভাবান্তর না হয়, তবে সে গর্দভ বিশেষ – মনুষ্য পদবাচ্য নহে । (গোলেস্তা – হযরত শেখ শাদী (রঃ) ) ।
(চলবে)
ছেমা–কাওয়ালী জায়েজ প্রসঙ্গে, পর্ব-৪
১। সংগীত এক সম্প্রদায়ের জন্য ফরজ, এক সম্প্রদায়ের জন্য ছুন্নাত, এক সম্প্রদায়ের জন্য বেদআত । অর্থাৎ - ফরজ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের জন্য, ছুন্নাত প্রেমিকদের জন্য আর বেদআত গাফেল বা অলস ব্যক্তিদের জন্য । (ছিররোল আছরার – হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ)।
২। সারা বিশ্ব ধর্মীয় সংগীতে আল্লাহর প্রেম মত্ততায় ও সুরে পরিপুর্ন, কিন্তু একজন অন্ধ আয়নার মধ্যে কি দেখবে ? ‘ ( বোস্তা – হযরত শেখ শাদী (রঃ) ।
৩। গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মইন্নুদ্দিন চিশতি (রঃ) ভারত উপমহাদেশে এসে ভারতবাসীর মজাকি-রুচি দেখে তাদের রুচি মাফিক ধর্মীয় আরাধনায় বাদ্যযন্ত্র সহকারে সংগীত অনুমোদন করেছেন ।
৪। ছেমা জায়েজ - মাদারেজুন নবুয়ত–মাওঃ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহ্লভী (রঃ) ।
৫। ছেমা জায়েজ - তাফসিরে আহমদী ও তাফসিরে আজিজ ।
৬। ছেমা জায়েজ - তোহফাতুল আখইয়ার, আগানী এস্তিয়াব, একদুল ফরিদ, এহিয়াউল উলুল, তবলিছ, আজাবীর, কিমিয়ায়ে সা’আদত, কেতাবুল আহকাম, এবং আদিল্লাতুছ ছেমা ও শামী ।
৭। সংগীত মাত্রকেই হারাম বললে কাফের হবে – ‘ফতওয়ায়ে খাইরিয়া’, ‘বাওয়ারেকুচ্ছমা ফি তকফিয়ে’, মই এয়াহরেমুচ্ছমা । (চলবে)
ছেমা–কাওয়ালী জায়েজ প্রসঙ্গে, পর্ব-৫
১। ‘নোক্কাতুল হক’ কিতাবে – মাওলানা আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রঃ) বর্ণিতঃ
(ক) যে ব্যক্তি সকল অবস্থায় সর্বপ্রকার ছেমা বা সংগীতকে হারাম বলে বিশ্বাস করে, সে অন্ধ জাহেল এবং সকল প্রকার সংগীতকে সর্বাবস্থায় জায়েজ মনে করে সে ফাসেক বা গোনাহগার ।
(খ) ছেমা মোবাহ বা হালাল । ইমাম চতুষ্টয়ও ছেমা শ্রবণ করেছেন (মাদারেজুন নবুয়ত)
(গ) নির্দোষ সংগীত শ্রবণ করার সিদ্ধতা চার ইমাম স্বীকার করেছেন - হযরত মোল্লা আলী ক্কারী হানাফী (রঃ) ।
(ঘ) ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) খলিফা হারুন-অর-রশিদের মজলিসে সংগীত শ্রবণ করিতেন । তাঁকে সংগীত সম্পর্কে মাছআলা জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি ইমামে আজম আবু হানিফা (রঃ) এর প্রতিবেশীর সংগীত শ্রবণের বিষয়টি উল্লেখ করে বলতেন – সংগীত জায়েজ না হলে ইমাম আজম (রঃ) কখনো প্রতিরাতে নিজের মূল্যবান সময় অযথা নষ্ট কর